দেখা থেকে লেখা

[কবি জাকির জাফরানের অন্ধের জানালা বইয়ের সমালোচনা। পরস্পর ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।]

‘অন্ধ চোখ অন্ধ হৃদয়ের চেয়ে ভালো দ্যাখে।’—কথাটা বলে গেছেন প্রাচীন আরবরা। চিরকালের সত্য, টিকে আছে; হয়তো তাই জাকির জাফরানের প্রকাশিতব্য কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘অন্ধের জানালা’ পড়তে গিয়ে পুরনো কথাটাই ঘুরেফিরে মনে এল। আর চোখের সম্মুখে কাঠামো পেল একটা ছবি : অন্ধ মানুষ, খোলা জানালা, আলো ঢুকছে, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে দৃশ্যের পর দৃশ্য। কিন্তু সে কি কিছু দেখছে? কী দেখছে? কবিতায় প্রবেশের আগে নামটিই আমাকে নিয়ে গেল ছবির ভেতর। দূর গ্রহ থেকে ভেসে এল আরও কয়েকটি নাম : শামসুর রাহমানের যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মান্ধের গান, আবদুল মান্নান সৈয়দের জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ… আমি নিজেও আমার একটি বইয়ের একাংশের নাম রেখেছিলাম ‘জন্মান্ধ শ্লোক’।

সঙ্গত কারণে জাকির জাফরানের কবিতা পড়তে গিয়ে নিজেকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করালাম; র‌্যাঁবোর নজির টেনে কবিদের তো বলা হয় ‘দ্রষ্টা’, তাহলে কেন এই ‘অন্ধ’ প্রেম? আমাকে আরও আরও অতীত খুঁড়তে হলো; যতীন্দ্রমোহন বাগচীর ‘অন্ধবধূ’ কবিতার সেই আলোহীন বউটির কথা মনে এল, ‘পায়ের তলায় নরম ঠেকল কী?/ আস্তে একটু চল না ঠাকুর ঝি/ ও মা, এ যে ঝরা-বকুল! নয়?’ অদ্ভুত এক সংবেদনশীলতায় ভরা এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেয়, চোখ থাকলেই কেবল ‘দেখা’ হয় না, দেখা মানেই ‘দেখা’ নয়; দেখার জন্যে চাই ভিন্ন চোখ, অন্তর্দৃষ্টি, চাই অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীল মন। এই দেখা চোখের সম্মুখে বিরাজমান উপরিতলের বস্তু পর্যবেক্ষণ নয়, বস্তুসমষ্টি নয়, বস্তুজগতের সঙ্গে ব্যক্তির অনন্ত মিথস্ক্রিয়ায় গভীরতলের মর্মার্থ উপলব্ধি করা।

জাকির জাফরানের কবিতাগুলো আমাদের দেখার চোখকে খুলে দেয়। যেদিকে আমরা তাকিয়েছি কেবল, কিন্তু দেখি নি, দেখেছি কিন্তু বুঝি নি, হয়তোবা বুঝে নেবার ফুরসত হয় নি আমাদের; জাফরান আমাদের ঘুরিয়ে নেন সেই দিকে। কবির কাজই তো সেই অদেখা দিগন্তের দিকে চোখ তুলে তাকাবার লক্ষ্যে প্রাণপণ ইশারা করা। কবিতার ভাষার কাজও হয়তো এর বেশি কিছু নয়—বস্তুবিশ্বের অর্থসমূহকে ভাষার কৌটোয় প্রাণভোমরার মতো আটকে রাখা।

‘অন্ধের জানালা’ দিয়ে জাকির জাফরান আদতে অনেক কিছু দেখান। অন্ধ যেমন স্পর্শ, শ্রুতি, ঘ্রাণ প্রভৃতির তুমুল তৎপরতায় বুঝে নেয় অনন্ত অসীম বিশ্বকে, সেই তৎপরতা দেখতে পাই জাকির জাফরানের কবিতায়। এ-বইয়ের দুটো পর্বে—‘রজনীগন্ধা-সেতু’ ও ‘অন্ধের জানালা’য় জাফরান প্রধানত তৈরি করেছেন দৃশ্য—ছবির পর ছবি, চিত্র, চিত্রকল্প। চিত্র ও চিত্রকল্পের দ্বৈতাদ্বৈত সম্মিলনে গড়ে ওঠে তাঁর কবিতা। অর্থ আর আপাত-অনর্থের যুগলবন্দিত্বে জমজমাট এই কবিতাগুলো বহু-অর্থ-সম্ভাবনাময়, আর তাই কবিতাগুলো প্রতীকী স্বভাবের। বিশেষ করে ‘অন্ধের জানালা’ পর্বের বেশির ভাগ কবিতা প্রতীকী কবিতার বহু-অর্থময়তার সম্ভাবনায় আচ্ছন্ন।

‘রজনীগন্ধা-সেতু’ পর্বের কবিতাগুলোতে প্রতীকী প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও ভাষার অর্থস্তর থেকে ভাববস্তু সুনির্দিষ্ট হয়ে ওঠে, ভাষিক উপাদানসমূহ চিন্তা ও বোধের প্রকাশে কোনো কুহকী অস্পষ্টতা তৈরি করে না। এ-কারণে এমন সহজিয়া বয়ান দুর্লভ হয়ে ওঠে না, ‘এভাবেই ভালবেসো তুমি—/ সমস্ত গুলির শব্দ/ আমারই বুকে তালা দিয়ে/ চাবি ফেলে দিও সমুদ্রে।’ কিংবা, ‘লাল ফুল, দুঃখ পাবার আগেই/ এত কেন রক্তচলাচল/ পাতায় পাতায়!’ লাল রঙ, ফুল, পাতা, রক্ত—সামগ্রিকভাবে একটি দৃশ্য তৈরি করে; এই দৃশ্য নিজেই যেন অচরিতার্থ ‘ডিজায়ারে’র চিত্ররূপ। ‘অন্ধের জানালা’ পর্বে দৃশ্যগুলো আরও সংহত, মিতবাক; সুনিশ্চিতভাবেই ‘রজনীগন্ধ-সেতু’ থেকে আলাদা। তিন-চার লাইনের কবিতাগুলো হাইকু, তানকা কিংবা জেন কবিতার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণধর্মিতা এবং সাংকেতিক উপস্থাপনাকে মনে করিয়ে দেয়। ‘নিঃসঙ্গতা—/ ছুরি দিয়ে ছুঁয়ে দেখে/ যুবকের হাত।’ কিংবা ‘প্রস্থানের/ শেষতম সিঁড়ি/ প্রথম দেখার স্থানে ভরা।’ কিংবা ‘পাখিরা পেরিয়ে যাচ্ছে/ কমলালেবুর/ লাল অন্ধকার।’ এ-রকম অসংখ্য উদাহরণ পেশ করা যাবে যেগুলো আমাদের দৃষ্টি-শ্রুতি-স্পর্শ-ঘ্রাণ-স্বাদ—সমস্ত ইন্দ্রিয়ে অর্থ ও অনুভবের সংকেত পাঠায়।

এ-কথাও মেনে নিতে দ্বিধা নেই, জাকির জাফরানের প্রতীকসমূহএমন কোনো ঐশী দূরত্ব তৈরি করে না যে, কবিতাগুলোকে কেবলই গূঢ় জাদুমন্ত্রসদৃশ উদ্ভট দৈব সংকেত বলে মনে হয়। তাঁর কবিতা থেকে সাম্প্রতিক প্রতিবেশ-পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করা সম্ভব। যদিও এ-কালের অনেকের কবিতা পড়ে বুঝে ওঠা প্রায় অসম্ভব যে, কবিতাগুলো কোন ভূ-রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক অঞ্চলের জীবন-যাপন ও অভিজ্ঞতার অংশ। পঞ্চাশ-ষাটের কবিরা প্রায়-মফস্বল ঢাকা শহরকে ডাবলিন-লন্ডন-জ্যুরিখ ভেবে চিত্তসুখ অনুভব করেছিলেন এবং কবিতায় সেইসব শহরের বঙ্গীয় সংস্করণ হাজির করেছিলেন। অন্যদিকে এ-কালের অনেকের কবিতাই দেশ-কাল-ইতিহাসহীন। সম্ভবত সেগুলো বিমূর্ত কোনো মহাকালের অংশ। জাকির জাফরান সে-অর্থে মহাকালের উদ্দেশ্যে কবিতা লিখেছেন বলে মনে হয় না। তাঁর চিত্র, চিত্রকল্প, প্রতীকতার আড়ালে থাকা পরিপার্শ্ব ও বঙ্গদেশকে চিহ্নিত করা যায় সহজেই।

প্রকৃতপক্ষে কবিতাকে কেবলই ‘কবিতা’ হিসেবে ভাবার সময় বুঝি ফুরিয়ে এল। কবিতা ভাষিক উৎপাদনমাত্র নয়। কবিতা সাংস্কৃতিক পণ্যও বটে। কবিতা চিন্তা ও বোধ, বিশ্বাস ও বাহাসের রিপ্রেজেন্টেশনও। কবিতা শৈল্পিক ও রাজনৈতিক। কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত ও কৃত্রিম। কবিতা ভাষার খেলা ও জাদু। কবিতা এক নয়, বহু। জাকির জাফরানও এক নন। বহু-সাংস্কৃতিক বিশ্বে এক থাকার সুযোগ কম, যেমন একা থাকার সুযোগ কম। জাকির জাফরানকে পেরিয়ে যেতে হয় প্রতীকের মিনার-গম্বুজ, দৃশ্যের পর কেবলই দৃশ্যের জন্ম তাঁকে দেখতে হয়; বদলে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে বাহাস আর মোকাবিলায়ও তাঁকে শামিল হতে হয়; পার্শ্বপৃথিবীর ছায়া-প্রচ্ছায়া ঘিরে ধরে তাঁর কবিতাকে। আর কবিতাও তাই হয়ে ওঠে একই সঙ্গে বর্ণনাধর্মী, প্রতীকী এবং চিত্রকল্পনির্ভর।

বিশ্বায়িত পৃথিবী, নাগরিক শব্দ ও বস্তু, বঙ্গদেশের লোকায়ত জনসমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতির টুকরো টুকরো উপস্থিতি—হোক তা ভাষিক, সাংস্কৃতিক কিংবা স্বরভঙ্গিগত—সাম্প্রতিক কালপর্বের প্রতি জাফরানের পর্যবেক্ষণ শক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। ‘অন্ধের জানালা’ থেকে পড়ছি, ‘চোখ—/ মেয়েটি যখন কাঁদছিল/ তখন কত ছিল/ তোমার মেগা পিক্সেল?’ ‘চোখ’ আর ‘মেগা পিক্সেল’ শব্দ দু’টির আন্তঃসম্পর্ক খেয়াল করা যাক। চোখ ও ক্যামেরার দৃষ্টি/ধারণক্ষমতার তুলনা চমৎকার এক প্যারাডক্সিক্যাল মনো-পরিস্থিতিকে তুলে ধরে। ‘অন্ধের জানালা’য় জাফরান সতর্কতার সঙ্গেই বদলে যাওয়া বিশ্বের নতুন উপাদানগুলোকে পুরনোর সঙ্গে মিশিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। কখনো কখনো হোঁচটও খেয়েছেন। দু-একটি ক্ষেত্রে নতুন আর পুরনোর মেলবন্ধন সহৃদয়হৃদয়সংবেদী হয়ে ওঠে নি। অন্তত আমার শ্রুতি বা কান মেনে নেয় নি উভয়ের সহাবস্থান।

তবু এ-কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে যে, ‘অন্ধের জানালা’ মোটেও দৃষ্টিরহিত নয়; আমরা যেটিকে বলি ‘অন্তর্দৃষ্টি’ বা ‘ইনসাইট’ সেটি প্রবলভাবে বিরাজ করছে এ-বইয়ে। কিন্তু জাকির জাফরান কি বিশেষ কোনো চিন্তা, দর্শন বা মতাদর্শের ইঙ্গিত দেন কবিতায়? নাকি তাঁর কবিতা নিছক ভাষিক নির্মিতির খেলা? যেমন খেলা খেলেছেন পল ভেলেরিরা, ‘আমি কিছু বলতে চাই নি, কিন্তু তৈরি করতে চেয়েছি।’ জাফরান কি তৈরি করার দিকে? নাকি বলার দিকে? এই প্রশ্ন তৈরি হবার কারণ এই যে, যিনি ‘দেখা’কে গুরুত্ব দিলেন, তাঁর দেখার মনস্তত্ত্বটি কী? সুস্পষ্ট কোনো ভাবাদর্শিক অবস্থান থেকে কি তিনি দেখেছেন পরিপার্শ্বকে? অন্ধের জানালা রাজনৈতিক ভাবাদর্শিক অবস্থানের কবিতা নয়। যদিও দু-একটি কবিতায় রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি তীব্র কটাক্ষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জাফরান মূলত দেখানোর দিকে। প্রদর্শক তিনি। দেখাগুলো সূক্ষ্ম, অবচেতনতাড়িত, যৌনতা ও স্বপ্নগ্রস্ত। ভাষার ক্যারিশম্যাটিক কেরামতি ও মেরামতি তাঁকে যথেচ্ছভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে বলেও মনে হয় না। যদি তা-ই হতো তাহলে তিনি হয়তো তাঁর তৈরি করা ব্যক্তিগত প্রতীক, চিত্র কিংবা শব্দবন্ধ খানিকটা সাফসুতরো করে এদিক সেদিক করে মনোমতো নিখুঁত শুদ্ধতম একটা-কিছু ‘বানিয়ে’ তুলতেন। কিন্তু তা হয় নি; উল্টো দেখা যাচ্ছে যে, ‘রজনীগন্ধা-সেতু’, ‘বকুল’, ‘জবা’, ‘লাল ফুল’, ‘লাল অন্ধকার’, ‘লাল বউ’, ‘লিবিডো-তাড়িত মাছ’, ‘বিড়াল-যুবতী’ কিংবা রং হিসেবে ‘লাল’ ও ‘সবুজে’র বিভিন্ন মাত্রার প্রয়োগ ঘুরেফিরে এসেছে। এই পুনরাবৃত্তি বিশেষ কোনো অনুভূতি ও উপলব্ধির প্রতি কবির কেন্দ্রীভূত থাকার দ্যোতক এবং একই সঙ্গে কবির ব্যক্তিভাষারও স্মারক।

প্রতীক, চিত্র ও চিত্রকল্প জাফরানের প্রধান কবিতা-কৌশলমাত্র; কবিতার মর্মশাঁসে আছে দারুণ এক রোমান্টিকতা। সমস্ত আবরণ খুলে নেয়া আমার আমি—যে নগ্ন, বাসনায় বিদ্ধ, যৌনতায় কাতর, মুগ্ধ আবেগে মর্মরিত—সেই আমিকে পাওয়া যায় অন্ধের জানালা-পথে। সেই আমি থরোথরো কণ্ঠে বলে ওঠে, ‘আমার পদচিহ্ন ছাড়া/ আর কোনও অতীত থাকবে না একদিন।/ আমার মুখমণ্ডল ছাড়া/ অন্য সবই পথ-ভুলানো চোরাগলি।/ তুমি কারো সঙ্গে কোথাও যেও না বকুল।’ যে-রোমান্টিকতাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি কালের চোরাস্রোতে, জাকির জাফরানের কবিতা সেই প্রত্যাখ্যাত রোমান্টিকতায় প্রত্যাবর্তন ও পুনর্লিখন। এই প্রত্যাবর্তনে পাঠক হিসেবে আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, সবাই মিলে কয়েক দশক ভরে ‘একটি’মাত্র কবিতা লেখার দেশে ঝাঁপি খুলে আলাদা আলাদা ‘আমি’ এবং তার যাপনের বিভিন্ন বয়ান বেরিয়ে আসছে, আমার ‘আমি’কে দেখা যাচ্ছে! ব্যক্তিক অনুভূতি, আনন্দ, উচ্ছ্বাসকে আড়াল করার নৈর্ব্যক্তিক প্রয়াসের মাধ্যমে কবিতা যখন অনির্দিষ্ট অনির্ণেয় খাতে প্রবাহিত হতে হতে রিক্ত ও অনুভূতিহীনতার খপ্পরে পড়ে গেছে, ভাষার চমকে ও গমকে এসে থমকে গিয়েছে ব্যক্তির একান্ত হৃদয়দোলানো রথ, তখন জাকির জাফরানের মতো কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।

অবশ্য সতর্কতার সঙ্গেই আমি বলতে চাই, কবিতার ‘আমি’ সব সময় কবির ‘ব্যক্তিকতা’ নাও হতে পারে। কেননা ‘পোয়েটিক পারসোনা’ আকারে কবি হাজির করতে পারেন ব্যক্তি-অতিরিক্ত কোনো উপলব্ধি। তবে সমর্পণের স্বভাব দেখে জাকির জাফরানের ক্ষেত্রে সংশয়হীন হওয়া যায়, প্রাণবন্ত এক লীলাময় রোমান্টিক সত্তা—লোকায়ত পরিভাষা ব্যবহার করে বলতে পারি ‘বাউলিয়ানা’—বিরাজমান তাঁর কবিতায়। তাঁর এই মায়া তাই অচেনা লাগে না—‘মায়া লেগে আছে গালে, চলে যাবে? যাও।/ দূরে গিয়ে দূরত্ব ঘোচাও।’ কিংবা ‘নিজেকে সঁপেছি আমি/ রয়ে গেছে বাউল জন্মের কিছু ঋণ,/ শুধু মন নয়/ আমার এ ঘুমও আজ তোমারই অধীন।’ অতঃপর সম্ভাব্য ‘পাসওয়ার্ড’ ভেঙে চিত্র ও প্রতীকচিহ্নগুলোর অর্থভেদ করে পাঠক হিসেবে অন্ধের জানালা পেরিয়ে আমরা পৌঁছে যেতে পারি রূপ-অরূপের মায়াময় দেশে, যেখানে ‘ব্যথিত নারীর দীর্ঘশ্বাসে/ আস্ত একটা জলপাই বন/ দুলে ওঠে—/ পাখিরা জানে না কোন বন আজ/ চুমুতে পল্লবহারা হবে…!’ কী অর্থ এই কবিতার? এই উক্তির?—প্রেম? যৌনতা? আধ্যাত্মিকতা? ডিজায়ার? ইলিউশন? চোখ বন্ধ করে একবার দৃশ্যটা ভাবতে থাকি। যে-অন্ধ কোনোদিন আকাশ দেখে নি, সেও নাকি আকাশের প্রকৃত রূপ কল্পনা করতে পারে। ধ্বনি, শূন্যতা, কল্পনা—দৃষ্টিবহির্ভূত সমস্ত কিছু তাকে সহায়তা করে আকাশটাকে আকাশের মতো করে ভেবে নিতে। আমি-সহ অপরাপর চক্ষুষ্মানদের জিজ্ঞেস করি, ওপরের লাইনগুলো পড়ে জলপাই বন কি দুলে উঠছে? চুম্বনের তুমুল শব্দে অরণ্য থেকে ঝরে পড়ছে কি পাতা? অনুমান করি, উত্তর, হ্যাঁ! তাহলে আর কী! কবিতার জয় হোক! দেখার জয় হোক!

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Prev
একগুচ্ছ কবিতা

একগুচ্ছ কবিতা

কাচপোকা আমরা তো মেঘ হতে পারতাম — রোদের আদরগুলো মেখে নিয়ে বাগানের বিপুল

Next
শাস্ত্র দিয়ে শাস্ত্র ভাঙেন বিদ্যাসাগর

শাস্ত্র দিয়ে শাস্ত্র ভাঙেন বিদ্যাসাগর

বিদ্যাসাগর বঙ্গদেশে এমন এক সময়ে জন্মেছিলেন যখন প্রতিভাবান কোনো ব্যক্তিকে যুক্ত

Total
0
Share