একগুচ্ছ কবিতা

কাচপোকা

আমরা তো মেঘ হতে পারতাম —

রোদের আদরগুলো মেখে নিয়ে

বাগানের বিপুল ফুলের নিচে

হেঁটে যেতে পারতাম

রঙিন কাচপোকার মতো।

বসন্ত

বিকেল মরে আসে। সন্ধ্যাও মরে যায়।

রাত্রিও মরতে থাকে সারা রাত।

কুয়াশার পাথর জুড়ে বসে থাকে শীত।

একদিন শীতেরাও মরে যায় অচেনা বসন্তে।

শ্বাসমূল

একেকটা ভোর সর্বজয়া ফুলের মতো স্নিগ্ধ।

একেকটা রাত নিঃশব্দ হরিণের চিত্রল পিঠ।

ভোর আর রাত্রির গল্পগুলো ঝরে যায়।

সুন্দরী গাছের শ্বাসমূলে জেগে থাকে নোনতা নদী।

রেখা

আমি কাউকে বলি নি, বসো,

চুপচাপ। নখ খুঁটো না;

শুধু বলি, এই দুপুর বেলাটিকে দেখো

তোমার হাতের রেখার মতো একা…

বাড়ি

তারপর আর কী!

প্রতিদিনই গল্পগুলো বদলে যায়,

পাথরের দেয়াল থেকে

পিঁপড়েরাও ফিরে যায় যার যার বাড়ি…

আমার কোনো বাড়ি নেই।

ট্রেন

রাস্তায় যাচ্ছিলাম। মেঘভর্তি মনের পাশ দিয়ে

উড়ে গেলো কবিতার দুটো লাইন।

বেদনার্ত স্লিপারের গায়ে ভর দিয়ে

নিঃসঙ্গ ট্রেনের মতো ছুটে গেলো

একটি আকাশ, অচেনা দিগন্ত…

আমি

ওটা একটা গাছ। রাধাচূড়া।

এটাও একটা গাছ। কৃষ্ণচূড়া।

জলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে যে —

ওর নাম কনকচূড়া। আর আমি?

আমি কেউ না — বাতাস এলোমেলো,

অদেখা ফুলের গন্ধে মৃত পাতাদের মৃদু মৃদু দীর্ঘশ্বাস…

ঝাঁপ

মনে তো হয়, এ কেমন জীবন!

সারা দিন ঈশ্বরের সঙ্গে বসে থেকে

শয়তানকে বলি, ভালোবাসি!

চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি ষোল তলা

দালানের শূন্য শীর্ষে, তবু তো কেউ

ঝাঁপ দিই না, তবু তো কেউ কারো হাতে

হাত রেখে বলছি না, সখা হে…

তাড়া

ধসে যাবে অনেক শহর; পুরনো প্রেমের মতো

নিভে যাবে নদী। সড়কে রাজপথে লুটিয়ে পড়বে দেখো

টিয়া পাখিদের সবুজ চিৎকার… আর

তখন তোমার ঘুম ভাঙবে, তখন তুমি স্বপ্নের ভেতরে দেখতে পাবে

তোমাকে তাড়া করছে এক হাজার টিয়া পাখির একটি সবুজ ঝাঁক….

শরীর

বুনো পাথরের গন্ধ।

শ্যাওলা নীল অন্ধকার।

আর একটা চাঁদের গহিন থেকে

নেমে আসছে জোছনার ছলাৎছল…

তো মা র শ রী র…

Total
0
Shares
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Prev
প্রেম পীরিতির পাঁচালি

প্রেম পীরিতির পাঁচালি

‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না’- বাংলা লোকগানের কথা। জলে ডুবুক আর না-ই ডুবুক, ডুবে

Next
দেখা থেকে লেখা

দেখা থেকে লেখা

[কবি জাকির জাফরানের অন্ধের জানালা বইয়ের সমালোচনা। পরস্পর ওয়েব ম্যাগাজিনে

Total
0
Share