বহু দিন ধরে অভিধানের খসড়া নিয়ে পড়ে আছি। ২০১৬ সালে পঞ্চাশ পৃষ্ঠার একটি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলাম। ইচ্ছে ছিল অতি-ব্যবহৃত ও প্রচলিত কিছু শব্দের উৎস নির্দেশ করবো। উদ্ভট, বিদঘুটে এবং বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি আগত শব্দের প্রতি ঝোঁক ছিল। কাজ এগোয় নি আর। তারপর আবার বসলাম ২০২০ সালে। করোনার প্রকোপে বসে বসে অভিধানের কাজ এগিয়ে নিলাম। হাজার হাজার মুখোমুখি পড়লাম। লক্ষ্য বদলে গেলো।
আমি চাই আমার অভিধানে থাকবে : ১. শব্দের উৎস, ২. বিভিন্ন অর্থগত প্রয়োগ, ৩. প্রথম প্রয়োগ, ৪. অর্থ পরিবর্তনের সম্ভাব্য রূপরেখা, ৫. আঞ্চলিক রূপের সঙ্গে ‘মান’ শব্দের সম্পর্ক, ৬. স্ল্যাং হিসেবে পরিচিত শব্দের উৎস বিচার, ৭. শব্দের বানানের রূপান্তর ইত্যাদি। এসব করতে গিয়ে অভিধানের আয়তন বাড়ল ঠিকই, কিন্তু আমার ধৈর্য কমতে থাকলো। গত দেড় বছরে কিছুই লিখি নি। লিখি নি, কিন্তু লিখতে চাই।
মনে পড়ে, আমার জীবনে প্রথম পড়া অভিধান ছিল এটি দেভের ইংলিশ-টু-বাংলা ডিকশনারি। হঠাৎ করেই আব্বা বইটি নিয়ে এসেছিলেন। বললেন, এটা হলো ডিকশনারি। আব্বার মুখেই প্রথম ‘ডিকশনারি’ শব্দটা শুনলাম। তখন সম্ভবত ফোর-ফাইভে পড়ি। আব্বা বলতেন অভিধান পড়লে ভোকাবুলারি বাড়ে। ‘ভোকাবুলারি’ শব্দটা শিখলাম আব্বার কাছ থেকেই।
লাল মলাটের মোটা বইটি পড়তে পড়তে কতো কতো দুপুর ঘুমিয়ে পড়েছি। কিছু কিছু শব্দের সঙ্গে ছবিও জুড়ে দেয়া ছিল। তারপর হাতে এসেছিল মলাট ছেঁড়া চলন্তিকা। প্রচ্ছদ ছিল না বলে অভিধানকারের নাম খুঁজে পাই নি তখন। পরে বুঝেছি, এই বইয়ের পেছনে আছেন রাজশেখর বসু। চলন্তিকা পড়ার আনন্দও দারুণভাবে মনে পড়ে।
অভিধান লেখায় হাত দেয়ার মূলে আছে অভিধান পড়ার অভ্যাস। শব্দের ইতিহাস ও উৎস বোঝার ক্ষেত্রে আমার চিরকালের কৌতূহল ঘোচাতে গিয়ে নিজেই লিখতে বসেছি। দুঃসাহস বটে। তাতে কী! আমার সামনে আছেন কত মহাজন! হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ভাবি — গোটা জীবন কাটিয়ে দিলেন অভিধান লিখে। বঙ্গীয় শব্দকোষ জীবনকে জব্দ করতে পারে নি। আমি একটু চেষ্টা করছি মাত্র। দেখা যাক। দেড় লাখ শব্দের পাণ্ডুলিপিটি আমার ওপর অভিমান করে বসে আছে! মান ভাঙাতে হবে শিগগিরই।